মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ, লালমনিরহাট:
গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক মৌসুমী আক্তারের লাশ এলাকায় দাফনে বাধা দেওয়া বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ ভিন্ন দাবি করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ দাবি করেন, এলাকায় মৌসুমীর লাশ আনতে বাধা দেওয়ার অভিযোগটি সঠিক নয়।
বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ বলেন, গত ২২ মে পোশাক শ্রমিক মৌসুমীর মা তার মেয়ের মৃত্যুর খবর আমাকে জানিয়ে বলেন, লাশ আনতে রংপুরে মেয়ের বাবা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, মৌসুমী ঢাকা মেট্রো ট-২২-২৫৯৮ ট্রাকে পাটগ্রামে আসার পথে রাতে মারা যায়। আমি ট্রাকচালক ও মালিকের সাথে কথা বলে রংপুর তাজহাট থানাকে অবগত করতে বলি ও পাটগ্রাম থানার ওসিকে ঘটনাটি জানিয়ে ৯৯৯ ফোন করে সহযোগিতা চাই। এরই মধ্যে ট্রাকের চালক আজিজুল ও সহকারী চালক বুড়িমারী এলাকায় মৌসুমীর করোনায় মৃত্যুর গুজব ছড়ায়। এ ধরনের গুজবে ট্রাকমালিক নান্নু মিয়ার সাথে যোগাযোগ করে মাইক্রো চালকের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মৌসুমীর বাবার সাথে কথা বলে লাশ নিয়ে আসতে বলি। মেয়ের স্বজনদের সাথে কথা বলে মেয়ের দাদার কবরের পাশে দাফনের ব্যবস্থা করি।
বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ বলেন, পরে জানতে পারি মৌসুমীর বাবা গোলাম মোস্তফা লাশ না নিয়ে বুড়িমারী চলে এসেছেন। অপরদিকে তাজহাট থানা পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে ওয়ারিশ না থাকায় লাশ কাউকে দিতে পারেনি। পরদিন ২৩ মে পুলিশ মৌসুমীর লাশ তার বাবার নিকট দেয়। কিন্তু ওইদিন দীর্ঘসময় অপেক্ষা ও যোগাযোগের চেষ্টা করে মৌসুমীর বাবা এবং মাইক্রোচালকের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ২৪ মে শুনতে পারি মৌসুমীর লাশ আদিতমারী থানা পুলিশ তিস্তা নদীত থেকে উদ্ধার করেছে।
বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ আরও দাবি করেন, গণমাধ্যমের খবরে মৌসুমীর বাবা বলেন, আমি নাকি মৌসুমীর লাশ এলাকায় আনতে নিষেধ করি ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাই। আমি এ ধরনের মিথ্যা, ভিত্তিহীন কথা কখনোই বলিনি। এটি আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক প্রকৃত অপরাধীদের উপযুক্ত বিচার দাবি করছি।
এর আগে গণমাধ্যমের কাছে মৌসুমীর বাবা গোলাম মোস্তফা বলেন, হাতে পায়ে ধরতে চেয়েও লাশ গ্রামে নিতে দেয়নি আবু সাঈদ চেয়ারম্যান। বাধ্য হয়ে একজন চালককে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছি দাফন করতে। তারাও দাফন না করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। অবশেষে আবার মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করতে হলো আদিতমারী থানায়। পুলিশের পাহারায় মেয়ের মরদেহ দাফন করি। মেয়ের মরদেহ নিয়ে যারা ব্যবসা করেছে, তাদের বিচার দাবি করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২২বছর বয়সী পোশাক শ্রমিক মৌসুমী অসুস্থতা নিয়ে গত ২১ মে ট্রাকে করে গাজীপুর থেকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। ওই ট্রাকেই তার মৃত্যু হয়। করোনাভাইরাস সন্দেহে পরের দিন লাশটি ফেলে পালিয়ে যায় ট্রাকচালক।
পরের দিন ২২ মে রংপুরের তাজহাট থানার পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। খবর পেয়ে পরের দিন হাসপাতালে ছুটে যান তার বাবা। তিনি লাশ গ্রামে কবর দিতে চাইলে বাধা দেন স্থানীয় চেয়ারম্যান। পরে লাশবাহী গাড়ির চালককে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে লাশটি দাফন করতে বলেন সেই বাবা।
কিন্তু লাশটি দাফন না করে তিস্তা নদীতে ফেলে দেয় ওই লাশবাহী গাড়ির চালক। সেই লাশ ২৪ মে উদ্ধার করে আদিতমারী থানার পুলিশ। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান ওই পোশাক শ্রমিকের বাবা। পরে প্রশাসনের নেতৃত্বে ২৫ মে ঈদের দিন বিকেলে মরদেহের জানাজা শেষে নিজ গ্রামে দাফন করে পুলিশ।